ভুট্টার ফল আর্মি ওয়ার্ম - Fall Army Worm of Maize

ক্ষতিকর পোকামাকড়

placeholder

পরিচিতিঃ

ফল আর্মিওয়ার্ম হলো লেপিডোপ্টেরা পর্বের একটি ক্ষতিকর কাটুই পোকা। এই পোকার সংক্রমন সবথেকে বেশি দেখা যায় আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সর্বশেষ তথ্য মতে, এ ক্ষতিকর পোকাটির আক্রমণ বাংলাদেশের বগুরা জেলার শেরপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের গোপাল্পুর গ্রামে পরিলক্ষিত হয়েছে।

  • ফল আর্মিওয়ার্ম বা সাধারন কাটুই পোকা পৃথিবীব্যাপী একটি মারাত্মক ক্ষতিকারক ও বিধ্বংসী পোকা হিসেবে পরিচিত।
  • এটি মূলত আমেরিকা মহাদেশের পোকা হলেও ২০১৬ সালে আফ্রিকা মহাদেশে এদের আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়।
  • ২০১৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ বিশেষত; ভারত এবং শ্রীলংকায় এদের আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়।

২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট কর্তৃক দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহে এদের  আক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছে। 

পোকা চেনার উপায়ঃ

  • দেহের উপরিভাগে দুই পাশে লম্বালম্বিভাবে গাঢ় রঙের দাগ রয়েছে।
  • মাথায় উল্টা Y অক্ষরের মধ্যে জালের মতো দাগ রয়েছে।
  • পোকাটির পৃষ্ঠ দেশের ৮ম খণ্ডে ৪ টি কালো দাগ রয়েছে।

ফল আর্মিওয়ার্মের জীবনচক্রঃ

  • ডিম, কীড়া, পুত্তলি এবং পূর্নাঙ্গ পোকা এই ৪ টি ধাপে পোকাটি জীবনচক্র সম্পন্ন করে থাকে।
  • এই পোকাটি শীতকালে ৭০-৮০ দিনে এবং গ্রীষ্মকালে ৩০-৩৫ দিনে জীবনচক্র সম্পন্ন করে থাকে।
  • জীবনচক্রের মধ্যে ডিম ( ৩-৫ ), কীড়া (১৪-২৮ ), পুত্তলি (৭-১৪ ) এবং পূর্নাঙ্গ অবস্থায় (১১-১৪) দিন অতিবাহিত করে থাকে।
  • স্ত্রী পোকা সাধারণত পাতার নিচে ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে ডিম ফুটে কীড়া বের হয়ে পাতা বা ফল খাওয়া শুরু করে।

ক্ষতির ধরণঃ

  • পোকাটি কীড়া অবস্থায় গাছের পাতা ও ফল খেয়ে থাকে।
  • পূর্নাঙ্গ পোকা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। 

ক্ষতির ব্যপ্তিঃ

কীড়া অবস্থায় পোকাটির খাদ্য চাহিদা কম থাকে এবং এসময় তারা গাছের পাতা ও ফল খেয়ে থাকে। তবে জীবনচক্রের শেষ ধাপসমূহে এর খাদ্য চাহিদা ৫০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। পূর্নাঙ্গ পোকা ভুট্টা, আলু বা অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে প্রায় ২০-১০০% পর্যন্ত ক্ষতি সাধন করে থাকে। তবে ভুট্টা ফসলে এর সর্বাধিক ক্ষতি পরিলক্ষিত হয়।  

অনুকূল পরিবেশ

গ্রীষ্ম মৌসুমে এটি সারাদেশে বিশেষত; ভুট্টা আবাদকৃত অঞ্চলসমুহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

আক্রান্ত ফসলের নমুনা

জৈবিক ও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে দমনঃ

  • সার্বক্ষণিক ফসলের মাঠ পরিদর্শন করা এবং লক্ষণ অনুসারে পোকাটি সনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।
  • ফেরোমন ফাঁদ (বিঘা প্রতি ৫টি) ব্যবহার করতে হবে।
  • আক্রান্ত গাছ হতে ডিম বা দলাবদ্ধ কীড়া চিহ্নিত করে পিষে মেরে ফেলতে হবে বা মাটির নীচে কমপক্ষে একফুট পরিমান গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে।
  • একই জমিতে অবশ্যই ভুট্টা পরবর্তী ফসল হিসেবে ভুট্টা বা এই পোকাটির অন্য পোষক ফসল চাষ না করে ধান চাষ করলে ‘ফল আর্মিওয়ার্ম’ এর আক্রমণ কমে যায়।
  • এছাড়াও ফসলের জমিতে পোকাটি সনাক্ত করা মাত্র নিকটস্থ উপজেলা কৃষি অফিস, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে

রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমনঃ

ফল আর্মি ওয়ার্ম নিয়ন্ত্রনে রাসায়নিক সমাধান হিসেবেঃ 

  • ভুট্টার জন্য 'ফুলটাইম ৫০ ডব্লিউ ডি জি' ২.৫ গ্রাম হারে ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে সন্ধ্যাকালীন সময়ে গাছ পুরোপুরি ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
  • অথবা গম, তুলা, তামাক, বাদাম, সরগম ইত্যাদি ফসলের জন্য 'এসিমিক্স ৫৫ ইসি' ২০ মিঃলিঃ হারে ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে সন্ধ্যাকালীন সময়ে গাছ পুরোপুরি ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
  • অথবা ভুট্টা, সয়াবিন ও সবজির জন্য 'রিলোড ১৮ এস সি' ৫ মিঃলিঃ হারে ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে সন্ধ্যাকালীন সময়ে গাছ পুরোপুরি ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। 

সুপারিশকৃত পণ্য সমূহ

আমাদের ব্র্যান্ডসমূহ