আলুর মড়ক বা নাবী ধ্বসা রোগ (Late Blight of Potato)

রোগবালাই

placeholder

পরিচিতিঃ

আলুর লেইট ব্লাইট বা মড়ক রোগ বিশ্বজুড়ে অন্যতম একটি ক্ষতিকারক রোগ। এ রোগ বাংলাদেশের আলু উৎপাদনের প্রধান অন্তরায়। ১৯৯০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে আলুর চাষাবাদ বিস্তারের পাশাপাশি এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকে। এটি মূলত এক ধরনের শ্যাওলা/শৈবাল (algae) জাতীয় উদ্ভিদ। এ কারণেই স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। এর প্রাথমিক ও প্রধান পোষক আলু।

  • Phytophthora intestans নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়।
  • ফসলের বাড়ন্ত পর্যায়ে আক্রমণ করে।
  • ফসলের পাতার অংশে আক্রমণ করে।

ক্ষতির ধরণঃ

  • প্রাথমিক অবস্থায় পাতার উপর ছোপ ছোপ ভেজা বাদামী বা ফ্যাকাশে গোলাকার ও এলোমেলো পানিভেজা দাগ দেখা যায়।
  • আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ সমস্ত দাগ সংখ্যায় ও আকারে দ্রুত বাড়তে থাকে এবং বাদামী থেকে কালো রঙ ধারণ করে।
  • পাতার নিচে সাদা সাদা পাউডারের মত ছত্রাক দেখা যায়।

ক্ষতির ব্যপ্তিঃ

আলুর মড়ক বা লেইট ব্লাইট রোগের আক্রমণে আলুর ফলন গড়ে শতকরা ৩০ ভাগ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। 

আক্রমনের ধরণ

১. রোগের আক্রমণে প্রথমে গাছের গোড়ার দিকে পাতায় ছোপ ছোপ ভেজা হালকা সবুজ গোলাকার বা বিভিন্ন আকারের দাগ দেখা যায়, যা দ্রুত কালো রং ধারণ করে এবং পাতা পঁচে যায়।

২. সকালে মাঠে গেলে আক্রান্ত পাতার নীচে সাদা পাউডারের মত জীবাণু দেখা যায়।

৩. ঠান্ডা ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় আক্রান্ত গাছ দ্রুত পঁচে যায়। এ অবস্থায় ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যেই ক্ষেতে সমস্ত গাছ মারা যেতে পারে।

৪. এ রোগে আক্রান্ত আলুর গায়ে বাদামি থেকে কালচে দাগ পড়ে এবং খাবার অযোগ্য হয়ে যায়।

ক্ষেত মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হলে পচা দুর্গন্ধ হতে পারে।

অনুকূল পরিবেশ

  • ঠান্ডা (১০°-২০° সেঃ) ও আর্দ্র আবহাওয়ায় (৯১-১০০% আপেক্ষিক আর্দ্রতা) এই রোগের ছত্রাক জীবাণুর স্পোর উৎপন্ন ও স্পোর অংকুরণে সাহায্য করে।
  • রোগ সংক্রমণের পর রোগ বৃদ্ধির জন্য ২১°-২৪° সেঃ উষ্ণতার প্রয়োজন হয়।

গবেষনায় জানা গেছে যে –

আলুর মৌসুমে যদি নিম্নলিখিত ৪ টি অবস্থার সমন্বয় ঘটে তাহলে রোগ মহামারীরূপে দেখা যায়।

(১) রাতের তাপমাত্রা কমপক্ষে ৪ ঘন্টা শিশির হওয়ার উপযুক্ত উষ্ণতার (dew point) নিচে থাকলে,

(২) রাতে ১০° সেঃ অথবা এর কিছু বেশি তাপমাত্রা থাকলে।

(৩) পরবর্তী দিনে আকাশ মেঘাচ্ছন্নতার (cloudiness) গড় ০.৮ হলে,

(৪) এর পরে ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ৩.১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে রোগ মহামারী আকারে দেখা যায়।

আক্রান্ত ফসলের নমুনা

জৈবিক ও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে দমনঃ

  • রোগমুক্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
  • বর্ষা আরম্ভ হওয়ার আগে আগেই শুষ্ক আলু রোগমুক্ত এলাকা হতে বীজের জন্য সংগ্রহ করতে হবে।
  • অনেক সময় বীজ আলু ভাদ্রের প্রখর রৌদ্রে একমাস ভাল করে শুকাতে হয়। এর ফলে আলুতে কোন প্রকার জীবাণু থাকলে রৌদ্র তাপে তা নষ্ট হয়ে যায়।
  • প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাতের বীজ ব্যবহার করা।
  • আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তুলে ধ্বংস করা।

রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমনঃ

  • এসিবিন ২৮ এস সি ৫ মিলি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
  • অথবা মিটপ ৬০ ডব্লিউ জি ১৫ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
  • অথবা নেমিসপোর ৮০ ডব্লিউ পি ৪৫ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
  • অথবা নিউবেন ৭২ ডব্লিউ পি ২০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
  • অথবা এক্সট্রামিল ৭২০ ডব্লিউ পি ২০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
  • অথবা কেমামিক্স ৭৫০ ডব্লিউ পি ২০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।

সুপারিশকৃত পণ্য সমূহ

আমাদের ব্র্যান্ডসমূহ