ধানের ব্লাস্ট রোগ (Blast)

রোগবালাই

পরিচিতিঃ

  • ব্লাস্ট ধানের একটি ছত্রাকজনিত রোগ।
  • বাংলাদেশে এটি ধানের অন্যতম প্রধান রোগ।
  • রোগের জীবাণু- Pyricularia oryzae নামক ছত্রাক জীবানু।
  • রোগটি রোরো ও আমন মৌসুমে বেশি হয় এবং চারা অবস্থা থেকে ধান পাকার আগ পর্যন্ত যেকোন সময় দেখা যায়।
  • এটি পাতা ব্লাস্ট, গিট ব্লাস্ট ও শিষ ব্লাস্ট নামে পরিচিত।
  • অনুকূল অবস্থায় রোগটি দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং ধানের প্রভূত ক্ষতি করে থাকে।
  • রোগ প্রবন জাতে রোগটি হলে শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত ফলন কমে যায়।

ক্ষতির ধরণঃ

  • এ রোগে প্রথমে পত্র ফলকে অতি ছোট ডিম্বাকৃতি দাগ পড়ে। এ দাগের মাঝামাঝি অংশ প্রশস্থ হয় এবং দু’প্রান্ত সরু থাকে যাতে দাগটাকে মনে হয় অনেকটা চোখের মত। বড় দাগগুলোর (০-১.৫ বা ০.৩-০.৫ সেন্টিমিটার) কেন্দ্র ভাগ ধূসর বর্ণের হয়। আক্রমণ প্রবণ ধানের পাতা মরে যেতে পারে। 
  • কিন্তু প্রতিরোধক জাতের পাতার মধ্যে আলপিনের মাথার মত ছোট বাদামি দাগকে বাদামি দাগ রোগ বলে ভুল হতে পারে। 
  • ধান গাছের ব্লাস্ট রোগ কান্ডের গিঁটেও আক্রমণ করতে পারে। গিঁট পঁচে গিয়ে কালচে হয় এবং সহজেই ভেঙ্গে যায়। ছড়া বা শিষের গোড়া আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত অংশ কালচে হয়ে ভেঙ্গে যেতে পারে যাকে শীষ ব্লাস্ট বলে। 
  • মাঠে এ রোগের আক্রমণ ব্যাপক হলে পুড়ে বসে যাওয়ার মত হয়।

ক্ষতির ব্যপ্তিঃ

  • ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের ফলে ধানের ফলন শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ কমতে পারে।

অনুকূল পরিবেশ

  • অধিক মাত্রায় নাইট্রোজেন সার এবং বাতাসের আর্দ্রতা এ রোগের প্রকোপ বাড়ায়। 
  • মেঘলা ও উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়ায় এই রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। 
  • এ ছাড়া রাতে ঠান্ডা, দিনে গরম ও সকালে শিশির পড়া (পাতায় শিশির জমে থাকলে) এ রোগের প্রকোপ বাড়ায়।
  • এই রোগের আক্রমণ চৈত্রের মাঝামাঝিতে তীব্রতর হলেও বৈশাখের মাঝামাঝিতে কমতে থাকে। এরপর জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত আক্রমণ মোটামুটি একই ধরনের থেকে আশ্বিন-অগ্রহায়ণ পর্যন্ত বেশ তীব্রতর হয়।
আক্রান্ত ফসলের নমুনা

জৈবিক ও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে দমনঃ

  • রোগমুক্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করা। 
  • সুষম মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা। 
  • জমিতে সব সময় পানি রাখা। 
  • কুশি অবস্থায় রোগটি দেখা দিলে বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করে সেচ দেওয়া।

রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমনঃ

  • ধানের ব্লাস্ট রোগের নিশ্চিন্ত সমাধান- ব্লাস্টিন ৭৫ ডব্লিউ ডি জি ৬ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। একর প্রতি মাত্রা ১২০ গ্রাম। 
  • অথবা এসিবিন ২৮ এস সি ১০ মিলি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। একর প্রতি মাত্রা ২০০ মিলি।

সুপারিশকৃত পণ্য সমূহ

আমাদের ব্র্যান্ডসমূহ