খোলপোড়া রোগ (Sheath blight)

রোগবালাই

পরিচিতিঃ

  • বাংলাদেশের ধানের প্রধান রোগগুলোর মধ্যে খোলপোড়া রোগটি অন্যতম।
  • রোগ জীবাণু- Rhizoctonia solani  নামক ছত্রাক জীবাণু।
  • রোগটি সাধারনত সর্বাধিক কুশি অবস্থা থেকে শুরু হয়।
  • বাংলাদেশের প্রায় সকল অঞ্চলেই রোগটি দেখা যায়। এবং এ রোগটি আউশ ও আমন মৌসুমের ধানে বেশি ক্ষতি করে।
  • রোগটি ধানের ফলন শতকতা ৩০ ভাগ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়।

ক্ষতির ধরণঃ

  • এ রোগে প্রাথমিক অবস্থায় পানির উপরিভাগে খোলের উপর পানি ভেজা হালকা সবুজ রঙের দাগ পড়ে। 
  • ডিম্বাকৃতি বা বর্তুলাকার এ সব দাগ প্রায় ১ সেন্টিমিটার লম্বা হয় এবং বড় হয়ে দাগগুলো ২-৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে। 
  • কয়েকটি দাগ পরে একত্রে মিশে যায়। তখন আক্রান্ত খোলটার উপর ছোপ ছোপ দাগ মনে হয়। 
  • অনুকুল এবং আর্দ্র পরিবেশে আক্রান্ত কান্ডের নিকটবর্তী পাতাগুলোও আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণতঃ ফুল হওয়া থেকে ধান পাকা পর্যন্ত রোগের লক্ষণ স্পষ্ট দেখা যায়। 
  • আক্রান্ত জমি মাঝে মাঝে পুড়ে বসে যাওয়ার মত মনে হয় । রোগের প্রকোপ বেশি হলে ধান চিটা হয়ে যায়।

ক্ষতির ব্যপ্তিঃ

  • ধানের খোলপোড়া রোগের আক্রমণের ফলে ধানের ফলন গড়ে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ কমতে পারে।

অনুকূল পরিবেশ

  • মেঘলা আকাশ, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি এবং গুমোট আবহাওয়া যদি একাধারে ২-৫ দিন বিরাজ করে এবং সে সঙ্গে তাপমাত্রা ২৫-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। 
  • ধান গাছে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ, শ্রাবণ-ভাদ্র, কার্তিক-অগ্রহায়ণ এই তিনটি সময়ে খোলপোড়া রোগের আক্রমণ বেশ তীব্রতর হয়।
আক্রান্ত ফসলের নমুনা

জৈবিক ও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে দমনঃ

  • সুষমভাবে ইউরিয়া, টিএসপি এবং পটাশ সার ব্যবহার করা। 
  • ধানের জাত অনুসারে সঠিক দুরত্বে চারা রোপণ করা (তবে ২৫x২০ সেন্টিমিটার দূরত্বই ভাল)। 
  • রোগ দেখা দিলে পর্যায়ক্রমে ক্ষেতে পানি দেয়া ও ক্ষেত শুকানো হলে রোগের প্রকোপ কমে। 
  • রোগ দেখার পর ১৫ দিন অন্তর বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ দুই কিস্তিতে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। 
  • ফসল কাটার পর ক্ষেতের নাড়া পুড়ে ফেলা।

রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমনঃ

  • ধানের খোলপোড়া  রোগের নিশ্চিন্ত সমাধান- এসিবিন ২৮ এস সি ১০ মিলি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। একর প্রতি মাত্রা ২০০ মিলি। 
  • এছাড়া ধানের খোলপোড়া রোগের অন্যান্য কার্যকরী বালাইনাশক হল- কন্‌জা প্লাস ১০ এস সি ৫ মিলি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। একর প্রতি মাত্রা ১০০ মিলি। 
  • অথবা ব্লাস্টিন ৭৫ ডব্লিউ ডি জি ৪ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। একর প্রতি মাত্রা ৮০ গ্রাম। 
  • অথবা প্রাউড ২৫ ই সি ২০ মিলি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। একর প্রতি মাত্রা ৪০০ মিলি। 
  • আক্রমণ বেশি হলে- ডিফার ৩০০ ই সি ৭.৫ মিলি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। একর প্রতি মাত্রা ১৫০ মিলি। 
  • গাছের চারা অবস্থায় রোগ প্রতিরোধের জন্য- এমকোজিম ৫০ ডব্লিউ পি ১০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। একর প্রতি মাত্রা ২০০গ্রাম।

সুপারিশকৃত পণ্য সমূহ

আমাদের ব্র্যান্ডসমূহ