ধানের টুংরো রোগ (Tungro)

রোগবালাই

পরিচিতিঃ

  • টুংরো ভাইরাসজনিত একটি মারাত্মক ক্ষতিকারক রোগ।
  • রোগের কারণ- Tungro virus 
  • এশিয়া মহাদেশের উঞ্চ অঞ্চলে টুংরোই সবচেয়ে প্রধান ভাইরাস রোগ। 
  • বাংলাদেশে প্রায় ২/৩ বছর পর পর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রোগটি দেখা দেয় এবং এতে প্রচুর ফলন কমে যায়। 
  • কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর জেলায় টুংরোর প্রাদুর্ভাব হয়ে আসছে।

ক্ষতির ধরণঃ

  • এ রোগ হলে ধান গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং কুশি কম হয়। আক্রান্ত পাতা ও পাতার খোল খাটো হয়। কচি পাতাগুলো পুরাতন পাতার খোলের মধ্যে আটকে থাকে। নুতন পাতা খাটো ও চওড়া হয় এবং মোচড় খেয়ে যায়। 
  • আক্রান্ত পাতা প্রথমে হালকা হলুদ এবং পরে গাঢ় হলুদ থেকে কমলা বর্ণের হয়ে যায়।  
  • ধানের জাত বিশেষ পাতার রং ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। পাতা ও কান্ডের মধ্যবর্তী কোণ বেড়ে যায়। আক্রান্ত ধান গাছ পাকা পর্যন্ত বাঁচতে পারে তবে আক্রমণ তীব্র হলে গাছগুলো শুকিয়ে মরার মত হয়ে যায়। 
  • হালকাভাবে আক্রান্ত গাছ বেঁচে থাকে তবে তাতে ২-৩ সপ্তাহ পর ফুল আসে এবং ফলন অনেক কম হয়। এসব গাছে ধানের ছড়া আংশিক বের হয়, দানাগুলো কালো ও অপুষ্ট হয়। 
  • দেরীতে আক্রান্ত গাছে ধান পাকা পর্যন্ত রোগের লক্ষণ অনেক ক্ষেত্রে ম্লান হয়ে যায়। টুংরো আক্রান্ত ধান গাছ কাটার পর তার মুড়ি ধানেও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।  
  • টুংরো রোগের বিশেষ লক্ষণ হলো ক্ষেতের সব গাছেই এক সংগে আক্রমণ হয় না। বরং বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু গাছে প্রথমে হলুদ হয়ে আস্তে আস্তে মরে যায়।

ক্ষতির ব্যপ্তিঃ

অনুকূল পরিবেশ

  • সবুজ পাতাফড়িং টুংরো রোগ ছড়ায়। বীজতলাতেই প্রথম আক্রমণ শুরু হয়। সবুজ পাতাফড়িং বীজতলার চারাতে ভাইরাস সঞ্চালন করে। এসব চারা রোপণ করার কিছুদিন পরই তাতে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। 
  • অনেক সময় বীজতলাতেই টুংরো আক্রমণে হলুদ বর্ণের চারা দেখা যায়। রোপণের পর কুশি বৃদ্ধি অবস্থায় ক্ষেতে বাহক পোকা থাকলে নুতন নুতন গাছে লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাই বীজতলায় এবং কুশি বৃদ্ধি অবস্থায় সবুজ পাতাফড়িং দেখা মাত্র দমন করতে হবে। 
  • বছরের বৈশাখ থেকে আষাঢ়, ভাদ্র থেকে কার্তিক এই ছয় মাস টুংরো রোগের আক্রমণ বেশ তীব্রতর হয়।
আক্রান্ত ফসলের নমুনা

জৈবিক ও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে দমনঃ

  • টুংরো আক্রান্ত জমির আশে পাশে বীজতলা করা থেকে বিরত থাকতে হবে,আড়ালি ঘাস, বাওয়া ধান নিধন করতে হবে। 
  • রোগাক্রান্ত গাছ তুলে মাটিতে পুতে ফেলতে হবে। 
  • আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে বাহক পোকা সবুজ পাতা ফড়িং নিয়ন্ত্রণ করুন। 
  • এ জমি থেকে উৎপাদিত ধান বীজ হিসেবে রাখা যাবে না।

রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমনঃ

  • বাহক পোকা দমনের জন্য- ফাইটার ২.৫ ই সি ১৫ মিলি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। একর প্রতি মাত্রা ৩০০ মিলি।  
  • অথবা এসিমিক্স ৫৫ ই সি ১০ মিলি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। একর প্রতি মাত্রা ২০০ মিলি। 
  • অথবা এসিপ্রিড প্লাস ৯৫ এস পি ৩ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে। বিঘা প্রতি মাত্রা ২০ গ্রাম এবং একর প্রতি মাত্রা ৬০ গ্রাম।

সুপারিশকৃত পণ্য সমূহ

আমাদের ব্র্যান্ডসমূহ